অর্থ সংকটে বাঁধের কাজে ধীরগতি
- আপলোড সময় : ২৩-০২-২০২৫ ১২:৪৬:৪২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০২-২০২৫ ১২:৪৬:৪২ পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর একমাত্র বোরো ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রতি বছর কোটি-কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০১৭ সালে হাওরে অকাল বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির পর হাওরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সরকার কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করে। নীতিমালায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে সম্পূর্ণরূপে কৃষকদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি পিআইসি’র মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করার নীতি প্রবর্তন করা হয়। তবে প্রতি বছরই নীতিমালা অনুসরণ না করে পিআইসি গঠন, সময় মতো বাঁধের কাজ শুরু ও শেষ করতে পারে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
যদিও নীতিমালায় বলা আছে ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে আবশ্যিকভাবে কাজ শেষ করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী ৫ দিন সময় হাতে থাকলেও সুনামগঞ্জের সবকটি উপজেলায় এখনো অনেক বাঁধে মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি- শনিবার পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। পুরোটা কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে দাবি পাউবো’র।
স্থানীয় এলাকাবাসীর মতে, বেশিরভাগ জায়গায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্ধেকের কিছুটা বেশি কাজ হয়েছে। অন্যদিকে কাজের ধীরগতির জন্য অর্থ ও মাটির সংকটকে দায়ি করছেন পিআইসিরা। তাদের দাবি- এখনো দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না পাওয়ায় কাজ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) লোকজন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, এবার জেলার ১২টি উপজেলার ৫৩টি হাওরে ৬৮৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ হচ্ছে। এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২৭ কোটি টাকা। শনিবার পর্যন্ত ৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুরুতে হাওরে মাটির সংকটের কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবছর কাজ শেষ করা হবে। এদিকে কাজের তুলনায় এখন পর্যন্ত বরাদ্দকৃত অর্থ কম পাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন পিআইসিরা। সময়মতো টাকা না পেয়ে অনেকে ধারদেনা ও ঋণ করে বাঁধের কাজ করছেন বলে জানাগেছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে নাগরিকদের সামাজিক সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ আয়োজিত হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা, প্রতিবন্ধকতা ও ধীরগতি নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাঁধের কাজ নিয়ে শুরু থেকেই নানা অভিযোগ আছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন, প্রকল্প নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে অনিয়মের কারণেই কাজে বিলম্ব ও গাফিলতি হয়। তদারকিতেও রয়েছে দুর্বলতা। সভায় প্রফেসর পরিমল কান্তি দে বলেন, আমরা ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চাই। কিন্তু এটির অভাব রয়েছে। এটি নিয়ে প্রতিবছর কথা হয়। সময়মতো কাজ শুরু এবং শেষ করতে না পারাও অনিয়মের মধ্যে পড়ে। এই কাজে যত বেশি স্থানীয় কৃষকদের সম্পৃক্ত করা যাবে, ততই কাজে অনিয়ম কম হবে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জেলা সভাপতি ইয়াকুব বখত বলেন, ২০১৭ সাল থেকে কথা বলছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল হচ্ছে না। মাঠে মাঠে ঘুরে, স্থানীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে পরামর্শ দিলে সেগুলোর বাস্তবায়ন হয় না। কাজের সময় আর মাত্র আট দিন আছে। অথচ অনেক জায়গায় কাজ চলছে ঢিমেতালে। এতে ফসল ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, এখন পর্যন্ত ৮৫ ভাগ বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি প্রকল্পের মাটির সংকটের কারণে মাটি ভরাটের কাজ সামান্য বাকি রয়েছে। আশা করছি এবার নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দেওয়া হবে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তৃতীয় কিস্তির টাকাও দেওয়ার চেষ্টা করবো। বাঁধের নির্মাণকাজ এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ